অর্ণব মল্লিক
নানান মৌসুমী ফলের সমাহার নিয়ে চলে এসেছে মধু মাস নামে খ্যাত জ্যৈষ্ট। চারদিকে হারেক রসালো ফলের মৌ মৌ ঘ্রাণে এখন প্রকৃতি উতলা। যদিও বাংলা অভিধানে চৈত্রকেই মধুমাস বলা হয়ে থাকে। কিন্তু অভিধানের সে মধুমাস অভিধানেই থেকে গেছে। ফলপ্রিয় বাঙালি মানুষ জ্যৈষ্ঠকেই মধুমাস বলে চিনে আসছে। নানান ফলের সুস্বাদু ঘ্রাণ স্বাদে এখন জ্যৈষ্ঠই যেন মধুমাস। জ্যৈষ্ঠের আগমনের সাথে সাথে নতুন নতুন মৌসুমী বাহারি সুস্বাদু ফল এখন বাজারে দেখা মিলছে।
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান বাজার। যেই বাজারটিতে প্রতি মৌসুমে প্রায় সব ধরণের ফলের দেখা মিলে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। শুক্রবার (৫ জুন) চন্দ্রঘোনাস্থ লিচুবাগান বাজারে গিয়ে দেখা মিলছে হারেক রকম সব সুস্বাদু মৌসুমী ফলের। যার মধ্যে রয়েছে আম, কাঁঠাল, লিচু, জাম, কলা, জাম্বুরা, আনারস, তাল, কলা, লেবু, জামরুল, ডাব সহ হারেক রকমের ফল। পাহাড়ের বিভিন্ন অঞ্চলে উৎপাদিত এসব ফল লিচুবাগান বাজারে নিয়ে আসেন বিক্রেতারা। এসব ফল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে শহরেও পরিবহন করা হয়ে থাকে। তবে এই বাজারে পাইকার বা খুচরা দুইভাবেই এসব মৌসুমী ফলের কেনা বেচা হয়ে থাকে।
লিচুবাগানের এই মৌসুমী ফল বাজার ঘুরে বিভিন্ন ফলের দরদাম সম্পর্কে জানা গেছে। বর্তমানে এই বাজারে আনারস বিক্রয় হচ্ছে জোড়া ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। আকারভেদে একেকটি কাঁঠাল বিক্রয় হচ্ছে ৫০ থেকে ১০০ টাকায়। এছাড়া বর্তমানে লিচুবাগানে বিভিন্ন জাতের আমের দেখা মিলেছে। তার মধ্যে পাহাড়ের জনপ্রিয় আমরূপালিও পাওয়া যাচ্ছে। যার প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় মিলছে। এছাড়া অনান্য দেশীয় জাতের আম রাঙ্গুই, ফজলী, সহ বিভিন্ন জাতের আম ৫০, ৬০ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামে বিক্রয় হচ্ছে। এছাড়া লিচুবাগানে প্রথমদিকে চাইনা থ্রি জাতের লিচুর দেখা না মিললেও বর্তমানে কিছুসংখ্যক দোকানে চাইনা থ্রি লিচুর দেখা মিলেছে। যা ৫০টি লিচু ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রয় হতে দেখা গেছে। বিশেষ করে এবার চাইনা থ্রির ফলন কম হওয়াতে দাম অনেকটা বেশি বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন। সেইসাথে দেশীয় লিচু এতদিন পাওয়া গেলেও বর্তমানে তেমন একটা বাজারে মিলছেনা। অন্যদিকে তালের শাস পাওয়া যাচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা ধরে। টক,মিষ্টি পুতি জামের দেখা মিলেছে এই বাজারে। যা প্রতি কেজি ১০০ টাকা ধরে বিক্রয় হচ্ছে। এছাড়া অনান্য মৌসুমী ফল গুলো মোটামুটি সহনীয় দামে বিক্রয় হতে দেখা গেছে লিচুবাগান বাজারে।
লিচুবাগান বাজারের কয়েকজন ফল বিক্রেতা জানান, বর্তমানে লিচুবাগান বাজারে বলতে গেলে সব ধরনের মৌসুমী ফলে সয়লাব। দামও তুলনামুলক অনান্য বছরের তুলনায় কম আছে। ফলনও খুব ভালো হয়েছে যার ফলে আমরা এবার সব ধরনের মৌসুমী ফল বাজারে আনতে পেরেছি। এছাড়া ক্রেতারাও মৌসুমী ফল কিনে বেশ স্বাচ্ছন্দ বোধ করছেন বলে জানান।
অন্যদিকে লিচুবাগান বাজারে ফল কিনতে আসা কয়েকজন ক্রেতা জানান, এক বাজারে সব ধরনের মৌসুমী ফলের দেখা পাওয়াতে খুব ভালো লাগছে। বিশেষ করে প্রতিটি মৌসুমী ফলে প্রচুর ভিটামিন থাকায় আমরা সব ধরনের ফল অল্প অল্প করে ক্রয় করছি। দামও কিছুটা বেশি মনে হলেও তরতাজা মৌসুমী ফল কিনতে পেরে বেশ আনন্দিত বলে তারা জানিয়েছেন।
এদিকে লিচুবাগান বাজার থেকে মৌসুমী ফল পাইকার দরে কিনে শহরে নিয়ে যাচ্ছেন কয়েকজন বিক্রেতা। তারা জানান, আসলে লিচুবাগানে যেই মৌসুমী ফল গুলো পাওয়া যায় সেগুলোর অধিকাংশই আসে রাঙামাটির বিলাইছড়ি, কাপ্তাই, রাজস্থলী সহ বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকা থেকে। তাই এসব ফল ফরমালিন মুক্ত হওয়ায় যথেষ্ট ভিটামিন থাকে এবং ক্রেতাদের কাছে চাহিদাও থাকে বেশি। তবে চাষীদের কাছ থেকে এসব ফল আরো সস্তায় কেনা হলেও বাজারে এসে দাম তুলনামুলক বেড়ে যায়। এখানে যাতায়াত খরচ, নৌখরচ, পরিবহন ব্যয় বেশি হওয়ায় এই অবস্থা হয়। তবে এসব ফল বিক্রয় করে পাইকার এবং খুচরা ব্যবসায়ী উভয়ে বেশ লাভবান হয়ে থাকে বলে তারা জানান।
প্রসঙ্গত, রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনার লিচুবাগান এই বাজারটি মৌসুমী ফল ক্রয় বিক্রয়ের জন্য অন্যতম জনপ্রিয় বাজার। এখানে প্রতি মৌসুমেই বিভিন্ন জাতের ফলের প্রায় কোটি টাকার ক্রয়-বিক্রয় বাণিজ্য হয়ে থাকে। বিশেষ করে রাঙ্গুনিয়া ছাড়াও চট্টগ্রামজুড়ে এই বাজারের যথেষ্ট পরিচিতি ও খ্যাতি রয়েছে।