দেশের জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী ও সুরকার রাঙ্গুনিয়ার প্রসেনজিৎ মহাজন পিজিত। নিয়মিত গান করে যাচ্ছেন দেশের শীর্ষ টিভি চ্যানেল, গুনী শিল্পীদের সাথে, শুধু গান নয় মানবিক মানুষ হিসেবেও সাধারন মানুষের কাছে তিনি বেশ প্রশংসিত। ছোটবেলা থেকেই অনেক চড়াই-উৎরাই পার করে নিয়মিত গান করে চলেছেন তিনি। এক কন্সার্টে গেয়েছিলেন জনপ্রিয় ব্যান্ড শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু সাথে, কন্ঠ মিলিয়েছেন কিংবদন্তি ফেরদৌস ওয়াহিদ,ফাহমিদা নবী সহ অনেকের সাথে। এবার পিজিত গাইলেন দুই বাংলার কিংবদ্বন্তী সংগীতশিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তীর সাথে। পাক্ষিক চলমান রাঙ্গুনিয়া- এর সাথে একান্ত আড্ডায় শোনালেন গ্রামে বেড়ে উঠার কথা। সঙ্গীতে কিভাবে প্রবেশ করলেন সেকথাও। রাঙ্গুনিয়া উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের ঠান্ডাছড়ি গ্রামের সন্তান পিজিত সম্প্রতি নিজ গ্রামের বাড়িতে দিদিমনির অন্তেষ্টিক্রিয়াতে এলে পাক্ষিক চলমান রাঙ্গুনিয়া পরিবারের সাথে ঘন্টাব্যাপি চা-আড্ডায় মেতে উঠেন তিনি। এই আড্ডায় ছিলেন রাঙ্গুনিয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ ইলিয়াছ তালুকদার, সদস্য মুহাম্মদ তৈয়্যবুল ইসলাম। আড্ডার এক ফাঁকে আমরা যখন সাক্ষাৎকার র জন্য বল্লাম একদম ঘরোয়া পোষাকে লুংগি-গেঞ্জি আর এলোমেলো চুল আর কোন রকম পরিকল্পনা ছাড়ায় রাজি হন।
জগলুল হুদা ও আব্বাস হোসাইন আফতাব।
পাক্ষিক চলমান রাঙ্গুনিয়া- প্রথমেই শুভেচ্ছা সংগীত নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রবেশের জন্য। গ্রাম থেকে কিভাবে বেড়ে উঠেছেন ?
পিজিত : অসং্খ্য ধন্যবাদ, এটা রাংগুনিয়া প্রতিটা মানুষের প্রাপ্তি।
আমার বাবা ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। রানীরহাটে একটি মুদি দোকান চালাতন। মা ছিলেন একজন মন্দিরের সেবিকা। আমার ঘরে আশ্রম আছে। সেখানে প্রতি বছর হাজার দশেক এতিম ও দুস্থর খাওয়া-দাওয়া করতো। কিন্তু মায়ের মৃত্যু এবং বাবার ব্যবসায় লোকসান হলে সবকিছু উলট-পালট হয়ে যায়। পরিবারে একমাত্র বড় ভাই চট্টগ্রামে নামমাত্র বেতনের একটি চাকরি করে নিজের খরচ চালাতো তখন। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য থেকে শখের সংগীত টাকে জীবন জীবিকা হিসেবে নিয়ে সংগীতে পদার্পন হয়েছে এবং গানের জন্য যুগপ্রায় ঘরছাড়া।
পাক্ষিক চলমান রাঙ্গুনিয়া- পরিবারের প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও সংগীতে নিজেকে কিভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন?
পিজিত : আমার পরিবার আত্মীয়-স্বজন কিংবা সমগ্র উপজেলা মধ্যে কেউই গানের সাথে জাতীয়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলো না। এমনকি গান-বাজনাও পছন্দ করতো না। স্কুল পড়া-শোনার সময় বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিই। প্রতিযোগিতায় একাধিকবার পুরস্কার জেতার পর আমার গানের প্রতি মায়া এবং ভালবাসা কাজ করে। এছাড়া মা যখন ভোরবেলা হারমোনিয়াম দিয়ে গুণগুণ করে আরাধনা করতো, তখন শুয়ে শুয়ে তা বেশ উপভোগ করতাম। সেখান থেকেই গানই আমার সব হয়ে যায়। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময় চট্টগ্রামে ব্যান্ড দল “চাঁটগা” গড়ে তুলি। যা এখনো চট্টগ্রামে বেশ জনপ্রিয় ব্যান্ড হিসেবে পরিচিত। চট্টগ্রামের শুরুটা খুব কঠিন ছিল,বিয়ে বাড়িতে গান,আর চট্টগ্রামের কতোয়ালী মেঘনা হোটের ছোট একটা রুমে সংগীতচর্চা। এবং চট্টগ্রামে প্রতিষ্টিত অবস্থান ছেড়ে গানের ক্ষুধায় একসময় ঢাকায় আসি দেশের শীর্ষস্থানীয় চ্যানেল গুলোতে গানের সুযোগ,দেশ সেরা গীতিকার সুরকারদের সান্নিধ্য এবং ধীরে ধ গান নিয়েই এখনো নিঃসঙ্গ পথচলা আমার।এখন নিয়মিত কাজের চেস্টা চলছে কলকাতায় ও।
পাক্ষিক চলমান রাঙ্গুনিয়া- বর্তমানে ঢাকায় কোথায় থাকছেন এবং গান নিয়ে কাজের পাশাপাশি আর কি করছেন, ব্যাক্তিগত জীবন ?
প্রসেনজিৎ মহাজন পিজিত : আমি পাঁচ বছর ঢাকায় মিরপুরেই আমার বাসা-স্টুডিও। বলতে পারেন সংগীত আমার ধ্যান জ্ঞ্যান সংসার, এ বাউন্ডেলে জীবন মেনে নিয়ে জীবন সংগী হতে অনেকে চাইনা তাই এখনো একা,হাহাহা গানজুটি মিলে গেলেই চারহাত এক হবে।
দুবাংলায় অনুস্টান,সংগীতচর্চা, ছাড়াও আমার একটি মানবিক সংঘটন রয়েছে যার নাম “মানুষ” গানের টাকায় প্রানের সেবা -স্লোগানে, দেশের যেকোন অসহায় রোগী নিয়ে আমরা কাজ করে,বন্যা নদী ভাংগন এলাকায় ছুঠে যায় যার ফান্ডিং পুরোটা আমার সংগীত এবং সংগীতপ্রিয় বন্ধুদের দ্বাড়া পরিচালিত হয়।।
ছোটবেলায় মা লুকিয়ে মানুষ কে সাহায্য করতো,তার কাছেও এসব অনুপ্রেরনা বাবা দিবস মা দিবসে অসং্খ্য বাবা মায়ের কাছে ছুঠে যায় কিছু করার চেস্টা করি।
পাক্ষিক চলমান রাঙ্গুনিয়া- সম্প্রতি আপনি দুই বাংলার লিজেন্ডারী সংগীতশিল্পী,জীবন মুখী গানের জন্য দুনিয়া বিখ্যাত নচিকেতা চক্রবর্তীর সাথে গান করেছেন। আপনাব অনূভুতি কী ছিল?
পিজিত : ছোটবেলা থেকে যার গান শুনে শুনে বড় হয়েছি, সঙ্গীতের প্রতি অনুরাগ সৃষ্টি হয়েছিলো সেই নচিকেতা দাদা আমার গায়কী পছন্দ করেন,ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প করেন এসব আসলে আমি বোঝাতে পারব না অনুভূতী।এক সময় টাকার অভাবে আমি দাদার শো র টিকেট পাইনি, এখন একসাথে কাজ হচ্ছে, পরিশ্রম আসলেই বৃথা যায়না আমার একযুগের সংগীত ক্যারিয়ারের সেরা প্রাপ্তি এটা। কিছুদিন আগে অনুস্টান করতে দাদা ঢাকায় এসেছিলেন, অনেক দিনের দীর্ঘ প্লেনের পর তখনই রামপুরার একটি স্টুডিওতে “মধ্যবিত্ত” শিরোনামের গানটি রেকর্ডিং হয়। ফাইনাল অডিও ভিডিও কাজ চলছে এখন ভারতে যেখানে দাদার সাথে আমি একসাথে গানটি করেছি এবং ভিডিওতেও দাদা থাকবেন।গীতিকার ও সুরকার আমিরুল মোমেনিন মানিক। সংগীতায়োজন করেছেন নাদিম ভূঁইয়া। ক্যামেরায় আরিয়ান-সাদী এবং বানিয়েছেন সিজু খন্দকার। শিগগিরই গানটি উপভোগ করা যাবে ইউটিউবে পিজিত মহাজন অফিসিয়াল চ্যানেল থেকে। সামনে দাদার সাথে আরো গান এবং দুবাংলায় একসাথে অনুস্টান করব।
পাক্ষিক চলমান রাঙ্গুনিয়া- “মধ্যবিত্ত” গানের মাধ্যমে সমাজের প্রতি আপনাদের বার্তা কী ছিলো?
পিজিত : মধ্যবিত্তরা এ সমাজে খুব অসহায়। তারা খেয়ে, না খেয়ে হাসিমুখে বেঁচে থাকে। তাদের এই করুণ বাস্তবাটি এই গানের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। দাদা (নচিকেতা) যেহেতু জীবনমুখী গান গেয়ে জীবনটা কাটিয়েছেন, আমিও প্রতিনিয়ত চেষ্টা করব দাদার মতো সমাজের বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে গান করতে।’
পাক্ষিক চলমান রাঙ্গুনিয়া- নচিকেতার সাথে গাইতে পারা এবং গান করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিলো?
পিজিত : দাদা মানুষের কথা বলে, অন্যায় অবিচারের কথা বলে, ভুল করলে সরকার কেও ছাড় দেয়না,এজন্য অনেক বিপদেও পড়েছেন কিন্তু কন্ঠ থামেনি। দাদা একটা অনুপ্রেরনা,দাদার গানে হাজারো বাউন্ডেলে বেঁচে থাকার পথ পাবে, আর আমিতো কাছে গিয়েছি রোজ শিখছি এখন। এখনো ঘোরের মাঝে আছি, আহ!স্বপ্নের মানুষের সাথে এক ই কন্ঠে গান,আমাকে আরো হাজারো গান বানাতে সাহস দিল,চট্টগ্রামে বিয়ের অনুস্টানে গান গেয়ে ভোরে একসময় যাত্রী ছাউনীতে ছুঁয়ে থাকতাম, আর সে পিজিত এর সাথে নচিকেরা চক্রবর্তী কন্ঠ দিল এক গানে!
পাক্ষিক চলমান রাঙ্গুনিয়া- সংগীত শিল্পী পিজিত মহাজন প্রসঙ্গে নচিকেতার মূল্যায়ন কেমন ছিলো?
পিজিত : আমাকে নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় দাদা সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, সে আমার গান নিয়ে রিসার্স করে। আমার অনুরাগী, ছাত্র,এমন গান পাগলের জন্য কিছু করা উচিৎ, আর গানের বিষয়ে সুন্দর। গানটা ভালো হয়েছে। বাকিটা আপনাদের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।”
পাক্ষিক চলমান রাঙ্গুনিয়া- দেশের কোন কোন শিল্পীর সাথে এখন পর্যন্ত গান করেছেন?
পিজিত : ফেরদৌস ওয়াহিদের সাথে, ফাহমিদা নবীর সাথে “তিস্তা” নদী নিয়ে একটি গান করেছি সম্প্রতি, ক্লোজআপ ওয়ানের রন্টি, রফিকুল আলম, আবিদা সুলতানা, ফরিদা পারভীন,কিরন চন্দ্র রায়,চন্দনা মজুমদার,সালমা,জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত সংগীতশিল্পী কোনালসহ আরও অসংখ্য গুণী শিল্পীর সাথে আমার গান করা হয়েছে। ওপার বাংলাতেও কিছু কাজ হচ্ছে সে দেশের গুনীদের নিয়ে যা খুব শীঘ্রই শুনতে পাবেন।
পাক্ষিক চলমান রাঙ্গুনিয়া- আপনার মৌলিক গানের পরিমাণ কত ? কিংবদন্তী শিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদের জন্মদিনে আপনাদের “জীবন গল্প” গান বেশ প্রশংসিত হয়েছিলো। এই বিষয়টি যদি বলতেন।
পিজিত : এখন পর্যন্ত দুডজন মৌলিক গানে কণ্ঠ দিয়েছি,আসন্ন ৫০ টিরো বেশী,দেশের চলমান পরিস্থিতে সংস্কৃতি একটু থমকে আছে।
ফেরদৌস ওয়াহিদ স্যার আমার গানের পাগলামী বেশ ভালোবাসেন, আমাদের আসন্ন গান,যদি আবার ফিরে আসি, সহেনা তোমার কান্না নিয়ে চ্যানেল আই তারকা কথনে কথা বলেন।
প্রথম আলোয় উনার জন্মদিন সাক্ষাৎকারে আমাকে অবাক করে বলেন আমি জীবনে খুব কম শিল্পীর কাছে গান চেয়েছি,আমার ছেলে হাবিব ওয়াহিদের পর সেটা পিজিত, সে গানের নিবেদিত প্রান গান নিয়ে বাংলাদেশ কে অনেক দূর নেবে ছেলেটি।
পাক্ষিক চলমান রাঙ্গুনিয়া- রাঙ্গুনিয়া সংগীত নিয়ে আপনার কোন পরিকল্পনা রয়েছে কিনা? আপনাকে একদম সাদামাটা সাজে দেখলাক এ প্রথম স্কিনের পিজিত আর ঘরের পিজিত এত ব্যাতিক্রম?
পিজিত : রাজানগর ইসলামপুর রাংুনিয়া আমার শেখর।
গ্রামের বাড়ির সব দলের,সব মতের মানুষ আমাকে ভালোবাসেন। আমাকে উৎসাহ দেন। রাঙ্গুনিয়ার পিজিত বলে ডাকেন তখন খুবই ভালো লাগে। যখন আমায় কেউ চিনত না বাংলাদেশে তখন রাংগুনিয়ার অসং্খ্য ভাইয়েরা বলত পিজিত কে দাও প্রোগ্রামের দায়িত্ব সে ভালো না গাইলে দর্শক খুশি না হলে দ্বায় ভার আমাদের,এভাবে বার বার জিতিয়েছি তাদেরো। তাঁরা তাই সবাইকে গর্ব করে বলে আমাদের পিজিৎ একদিন আকাশ ছুঁবে। এ যে এলাকায় আসছি প্রায় দেড়বছর পর, কারন আমার নানী আমার গানের ভক্ত ছিল,টিভিতে অনুস্টান থাকলে এলাকার মানুষ এবং আত্মীয়দের ডেকে বসাতো টিভির সামনে তাও আবার মোবাইল এর এ যুগে,উনার চলে যাওয়া ঢাকা থেকে এক কাপড়েই ছুঠে এলাম।গ্রামের মানুষ কত খুশি দেখে,বলে নতুন গান কই শিল্পী! ভুলে গেলা আমাদের,হাহাহা
অবশ্যই আমি নতুনদের তুলে আনার ব্যাপারে কাজ করতে চাই। রাঙ্গুনিয়ায় সঙ্গীতের জন্য কিছু করতে চাই। রাঙ্গুনিয়া থেকে নতুন গায়ক উঠে আসুক। এক্ষেত্রে কেউ যদি আমার সাথে যোগাযোগ করেন এবং সর্বোচ্চ সহায়তা করবো।
পাক্ষিক চলমান রাঙ্গুনিয়া- গান নিয়ে আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?
পিজিত : অবশ্যই এমন কিছু গান গেয়ে যেতে চাই, যা কোয়ি ভিউ না হলেও মানুষের মনে গেঁথে থাকুক আমার বস আয়ুব বাচ্চুর জেমস ভাইয়ের সুবীর নন্দী দাদা এবং নচিদার গানের মত। যেনো আমি না থাকলেও আমার গানটা যুগ যুগ ধরে সবার মুখে মুখে বেঁচে থাকে। এমনভাবেই কিছু সৃষ্টি রেখে যেতেই আমার আগামীর পথচলা সাজাতে চাই।
তাছাড়া সংগীত নিয়ে উচ্চত্তর ডিগ্রী নিতে চাই দেশের বাইরে, শুধু সংগীতের উপর বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় হোক।
পাক্ষিক চলমান রাঙ্গুনিয়া- আমাদেরকে সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
পিজিত : আপনাদেরকেও ধন্যবাদ,হুটহাট চমকে দিলেন আমার মামারবাড়ি এসে। আপনাদের মাধ্যমে রাঙ্গুনিয়াবাসীকেও আমার ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। রাঙ্গুনিয়ার পিজিত হয়েই যেনো সারাবিশ্বে সুনাম ছড়িয়ে দিতে পারি, সেই দোয়া ও আশির্বাদ কামনা করছি, ধন্যবাদ।