রাঙ্গুনিয়ার সন্দ্বীপপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সেই শিক্ষক বদিউল আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এস এম আবদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সন্দ্বীপপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদিউল আলমকে একই স্কুলের ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা প্রতীয়মান হওয়ায় তাকে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো।
উল্লেখ্য, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কোদালা ইউনিয়নের সন্দীপপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থীর উপর যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠে। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত শিক্ষককে পাঠদান থেকে সাময়িকভাবে বিরত রাখা হয়েছিল।
স্থানীয় সূত্র ও বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ১ জুলাই ক্লাস চলাকালীন সময়ে বদিউল আলম নামের ওই শিক্ষক সন্দ্বীপপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে শারীরিকভাবে স্পর্শ করেন এবং আপত্তিকরভাবে নিপীড়ন চালান। শিশুটি ভয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি প্রকাশ না করলেও পরে বাড়িতে গিয়ে তার মাকে জানায়। পরদিন ২ জুলাই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলাল উদ্দিনের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগ পাওয়ার পর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি, স্থানীয় অভিভাবক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করা হয়। ওই বৈঠকে অভিযুক্ত শিক্ষক বদিউল আলম নিজের দোষ স্বীকার করেন বলে প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন।
ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ করেছে, প্রথমে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়। নানা পক্ষ থেকে পরিবারটির ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয় যাতে বিষয়টি জানাজানি না হয়। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও স্থানীয়দের মধ্যে ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ— বদিউল আলমের বিরুদ্ধে এর আগেও এমন অভিযোগ ছিল। আগের ঘটনাগুলোরও সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মহলের সহায়তায় এসব ঘটনা বারবার ধামাচাপা পড়ে গেছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলাল উদ্দিন বলেন,’ অভিযুক্ত শিক্ষক বদিউল আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে আমরা বিদ্যালয়ের অভিভাবকদের নিয়ে বৈঠক করি। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে পাঠদান থেকে বিরত রাখা হয়।
ঘটনার লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরও রাঙ্গুনিয়া উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় থেকে তাৎক্ষনিক কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল মোহাইমেন বলেন, ” অভিযোগের প্রেক্ষিতে শিক্ষক বদিউল আলমকে বরখাস্ত করতে জেলাতে পাঠিয়েছি। ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা প্রতীয়মান হওয়ায় তাকে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা বলেন,
“আমার মেয়ের সাথে ক্লাস চলাকালীন যৌন নিপীড়ন করেছে শিক্ষক বদিউল আলম। এর আগেও সে একাধিকবার এরকম করেছে। বারবার এসব ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যাওয়ায় সে সাহস পেয়েছে। তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়েছে।” প্রতিবেদন -আব্বাস হোসাইন আফতাব