আব্বাস হোসাইন আফতাব :
রাজস্থলির আকাশ আজ যেন আরও কিছুটা মেঘলা। বাঙালহালিয়ার কলেজ এলাকায় ভিড় করেছে শত শত মানুষ। তারা দাঁড়িয়ে আছে চোখের কোণে অশ্রু নিয়ে।কেউ জানে না কীভাবে সান্ত্বনা দিতে হয় এমন মৃত্যুতে।
উক্য চিং মারমা—
রাঙামাটির এক স্বপ্নবাজ কিশোর।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৭ম শ্রেণির ছাত্র। ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন ছিলো তার।
স্বপ্নটা সে বলতো বাবা-মায়ের কাছে।
বলতো— “বড় হয়ে বাবার মতো পাহাড়ে থাকবো না, বড় ইঞ্জিনিয়ার হবো।”
কিন্তু সেই স্বপ্ন আজ নিথর দেহ হয়ে ফিরে এলো। মৃত্যু এসে সব হিসেব উল্টে দিল।
ঘটনার শুরুটা এভাবে—
সোমবার (২১ জুলাই)। বেলা ১টা।
ঢাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনের পাশে বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। হঠাৎ ঘটে যাওয়া সেই দুর্ঘটনায় স্কুলে অবস্থান করছিলো উক্য চিং।
এক মুহূর্তে সব শেষ। জীবনের পাতায় হঠাৎ এসে লেখা হয়ে গেল মৃত্যুর কালো দাগ।
বাবার আর্তি—
ছেলের নিথর দেহ নিয়ে গ্রামে ফিরলেন পিতা উসাইমং মারমা।
কণ্ঠ রুদ্ধ। চোখের পানি শুকিয়ে গেছে।
তার শুধু একটি কথা—”আমার ছেলে কখনো আমাদের কথা ফেলতো না। খুব মেধাবী ছিল। ইঞ্জিনিয়ার হতে চাইতো।
আমি ওকে বলেছিলাম ঢাকায় গিয়ে যা লাগবে সব কিনে দেবো। কিন্তু ঢাকায় গিয়ে কিনলাম না কিছুই। শুধু ছেলের মরদেহ নিয়ে এলাম।”
মায়ের কান্না—
মা তেজিপ্রু মারমা আর্তনাদ করছেন—
“আমার উক্য চিংকে ফিরিয়ে দাও। ওর তো আরও অনেক কিছু করার ছিলো।”
পাহাড়ের বাতাসও যেন স্তব্ধ হয়ে আছে এই কান্নায়।
শেষযাত্রার অপেক্ষায়—
পরিবার জানিয়েছে,বুধবার (২৩ জুলাই)ধর্মীয় আচার শেষে পারিবারিক শ্মশানে উক্য চিং এর সৎকার করা হবে।
কিন্তু তার আগে—আজ রাতের পাহাড়ে শুধু একটাই শব্দ—কান্না।
উক্য চিং-এর জন্য প্রশ্ন রেখেই যাচ্ছে সবাই—
এমন মৃত্যু কি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায়?