ফেব্রুয়ারি মাসের পরে নির্বাচন করার চেষ্টা করা হলে কিংবা নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হলে আন্দোলন ছাড়া কোনো বিকল্প থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হুমাম কাদের চৌধুরী।
সোমবার (২৮ জুলাই) সকালে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কাদের নগরে নিজ বাসভবনে রাঙ্গুনিয়ায় কর্মরত পেশাদার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, “অন্তবর্তী সরকারের দুর্বলতা যেখানে যেখানে আছে, সেগুলো নির্বাচন ছাড়া ঠিক করা সম্ভব নয়। দেশের পক্ষে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে দরকষাকষির (নেগোশিয়েশন) ম্যান্ডেট বর্তমান সরকারের নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্বন্দ্বে আছে, কারণ এই সরকারের কোনো ম্যান্ডেট নেই। তাই এখন সব নির্ভর করছে সেনাবাহিনীর ওপর। কিন্তু সেনাবাহিনী তো ব্যারাকে ফিরে যাবে, তখন পুলিশের দায়িত্ব পুলিশকে নিতে হবে। এভাবে দেশকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হলে নির্বাচন ছাড়া উপায় নেই। আর এজন্য রাজপথে নামতে হলে আমরা প্রস্তুত।”
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তরজেলা বিএনপি নেতা সৈয়দ ফজলুল করিম মিনা, শওকত আলী নূর, হাজী ইলিয়াছ সিকদার, হেলাল উদ্দিন শাহ, নুরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম উত্তরজেলা ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ভিপি আনছুর উদ্দিন, মাকসুদুল হকক চৌধুরী মাসুদ, সৈয়দ ছাবের, আবুল হোসেন চৌধুরী, মহসিন তালুকদার, ফারুকুল ইসলাম, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আবু বক্কর, সদস্য সচিব হেলাল আহমদ, জাহাঙ্গীর, সাইদুল ইসলাম ইফাক, ইয়াকুব মাস্টার, শহিদুল ইসলাম, মো. লোকমান, মো. এমরান, মো. রাব্বি, মো. সারেক, মো. তারেক প্রমুখ।
হুমাম কাদের বলেন, “রাজনীতিবিদরা যখন সমালোচনার বাইরে চলে যায়, তখন তারা যা খুশি তাই করতে শুরু করে। তখন রাষ্ট্রকে নিজেদের রাজত্ব মনে করে। সাংবাদিকদের কাজ হলো ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়া — মিডিয়া চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের জায়গা। কিন্তু আমাদের দেশে গত ১৭ বছর ধরে সাংবাদিকরা নির্যাতিত হয়েছেন। মিডিয়া যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, সেটা নিশ্চিত করা না গেলে রাজনীতিবিদরাও সঠিক পথে ফিরবে না। অন্তত তাদের মনে ভয় থাকা উচিত— কেউ অন্যায় করলে সাংবাদিকরা তুলে ধরবেই ।”
তিনি আরও বলেন, “রাঙ্গুনিয়ায় এনজিও ব্যবসা ছাড়া হাছান মাহমুদ কিছুই করেননি। উন্নয়ন প্রকল্পের ফান্ডের এক টাকাও রাঙ্গুনিয়ার মানুষের কাছে পৌঁছেছে কি না, সন্দেহ আছে। তার নামে ২২টি এনজিও রেজিস্ট্রার্ড রয়েছে। পরিবেশমন্ত্রী থাকার সময় বড় ধরনের লুটপাট হয়েছে, টাকা পাচার হয়েছে। সেই টাকায় ২০ বছর রাঙ্গুনিয়া চালানো যেত। এসব বিষয়ে তদন্ত প্রয়োজন। রাঙ্গুনিয়ার উন্নয়নে কাপ্তাই সড়কসহ অন্যান্য সড়ক প্রশস্তকরণ, বেকারদের কর্মসংস্থান এবং জীবনমান উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।”
বিএনপির অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “গত দুটি অবৈধ নির্বাচনে বিএনপি কৌশলগত কারণে তিনজন করে প্রার্থী প্রস্তুত রেখেছিল। এতে কিছু বিভক্তি তৈরি হয়েছে। তবে নির্বাচনের সময় যখন একজন প্রার্থী চূড়ান্ত হবে, তখন প্রতীক ও দলের প্রতি ভালোবাসা থেকেই সবাই ঐক্যবদ্ধ হবে।”
তারেক রহমান প্রসঙ্গে হুমাম বলেন, “তারেক রহমানের মতো ধৈর্যশীল রাজনীতিক কমই আছে। আমি বারবার বলেছি, ভাইয়া, ক্ষমতায় এলে যারা নির্যাতন করেছে, তাদের দেখে নিতে হবে। কিন্তু উনি বলেন, ‘হুমাম, মাথা ঠান্ডা রাখো। যারা আমাদের উপর জুলুম করেছে, আল্লাহ তাদের মাফ করবে না।’ ফেরেশতারা আন্দোলন সফল করেছেন, আমরা শুধু মানুষ হিসেবে চেষ্টা করেছি।”
নিজের পিতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুর বিচার নিয়েও কথা বলেন হুমাম কাদের। তিনি বলেন, “আপনারা উনার নামের আগে শহীদ বলেন, কিন্তু তাকে বিচার প্রহসনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে। আমরা চাই, আদালতের মাধ্যমে এটা প্রমাণ হোক যে উনাকে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের শিকার করা হয়েছে।” প্রতিবেদন- আব্বাস হোসাইন আফতাব ও জগলুল হুদা