আব্বাস হোসাইন আফতাব:
যেন কর্ণফুলী আর পারে না। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বয়ে চলা এই নদী আজ যেন নিজেই নিজের ইতিহাসকে গিলে খাচ্ছে। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউনিয়নের দেওয়ানজী ঘাট, ফকির পাড়া, জেলেপাড়া, খোন্দকার পাড়ায় কর্ণফুলীর তীব্র ভাঙনে ধ্বংস হচ্ছে প্রিয় জনপদ, হারিয়ে যাচ্ছে ইতিহাস, উবে যাচ্ছে স্মৃতির চিহ্ন।
পাঁচশত বছরের পুরনো অলিশাহ ফকিরের মাজার, শতবর্ষী কবরস্থান, খোন্দকার পাড়া জামে মসজিদ, জেলেপাড়ার শ্মশান—সব আজ বিলীন হওয়ার পথে। ঝুঁকিতে রয়েছে স্কুল, মাদ্রাসা, প্রিয় পাঠশালা আর ছেলেবেলার মাঠ। যাদের ঘরবাড়ি এক রাতেই ভাঙনে হাওয়া হয়ে গেছে, তারা জানেন এই বেদনার গভীরতা।
শুক্রবার (১ আগস্ট) সকালটা তাই শুধু আরেকটি সকাল ছিল না। ছিল এক বুক হাহাকারের প্রতিধ্বনি। ভাঙন প্রতিরোধের দাবিতে দাঁড়িয়েছিলেন নদীপাড়ের শত শত মানুষ। দেওয়ানজী ঘাটে আয়োজিত মানববন্ধনে চোখ ছিল ছলছল, মুখে ছিল একটাই কথা—“বাঁচাও কর্ণফুলী, বাঁচাও আমাদের।”
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন হাজী ইলিয়াস সিকদার, পারভেজ, গাজী নাজিম, মানিক, ফিরোজ, শওকত, সালাম, রেজাউল, রিদুয়ান, ইকবাল, পরিমল, সন্তোষ, উজ্জ্বল, লিটন সহ অনেকে। তাদের কেউ হারিয়েছেন বসতভিটা, কেউ দেখেছেন মাজারের দেয়াল গড়িয়ে পড়তে, কেউ আবার নিজের শৈশবের স্কুলকে নদীর দিকে ঝুঁকে যেতে।
তারা বললেন, “আমরা নিম্ন আয়ের মানুষ। শুধু একটাই চাওয়া—আমাদের ঘরবাড়ি, প্রিয় স্থানগুলো যেন থেকে যায়। কর্ণফুলী যেন আমাদের এতদিনের স্মৃতি না গিলে খায়।”
তাদের সেই আকুতি এখন ভেসে বেড়াচ্ছে কর্ণফুলীর ঢেউয়ে, কেউ শুনবে কি?