আব্বাস হোসাইন আফতাব :
বাড়ির কাজ প্রায় শেষ। মায়ের মুখে হাসি, বোনের মনে স্বপ্ন আমানের বাড়ি। প্রবাসে রক্ত-মাংস দিয়ে গড়ে তোলা ঘর, যার প্রতিটি ইট আর রঙে লেগে আছে তার স্বপ্ন, শ্রম আর ভালোবাসা। এই ঘরেই তাকে বরণ করার কথা ছিল, কাঁধে করে নয়—হৃদয়ে করে।
কিন্তু বাস্তবতা বড় নির্মম। আমান উল্লাহ আমান (২৬) চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পারুয়া ইউনিয়নের সন্তান। আর বেতাগী ইউনিয়নের ডিঙ্গললোঙ্গা গ্রামে নানার বাড়িতে বেড়ে ওঠা এক তরুণ—ফিরলেন, তবে জীবন্ত নয়; নিথর হয়ে, কাফনে মোড়া দেহ নিয়ে।
কাতারে ইলেকট্রনিক্সের কাজ করতেন আমান। ২৭ জুলাই, একটি যন্ত্রে কাজ করার সময় আকস্মিকভাবে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারান। তার শরীর তখনও হয়তো ভবিষ্যতের স্বপ্ন আঁকছিল—দেশে ফিরে বিয়ে, পরিবার, স্বপ্নের ঘরে বসবাস। কিন্তু বিধাতা হয়তো অন্য এক পরিকল্পনায় রেখেছিলেন তাকে।
শনিবার (২ আগস্ট) ভোরে ফিরলেন তিনি—তাঁর নিজের বানানো বাড়িতে। জীবনের আর কোনো দিন সে চৌকাঠ পার হবেন না, এই জানাজা আর দাফনই তাঁর শেষ যাত্রা।
স্থানীয় বানিয়াখোলা জামে মসজিদের মাঠে সকাল ১১টায় জানাজা শেষে দাফন করা হয় আমানকে। মায়ের কান্না থামে না, বোনের চোখে ঝরে অনন্ত বিষাদ। প্রতিবেশী, বন্ধু, আত্মীয়—সবাই স্তব্ধ। শোকের ছায়া ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়।
একজন তরুণ, যার স্বপ্নের ডানা ছিল—প্রবাসে কষ্ট করে নিজের মানুষদের জন্য কিছু করার—সে স্বপ্ন অপূর্ণ রেখে চিরবিদায় নিলেন আমান। তার চলে যাওয়া যেন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—প্রতিটি প্রবাসীর হাসিমুখের পেছনে লুকিয়ে থাকে ত্যাগ, কষ্ট আর অনিশ্চয়তার ছায়া।