আব্বাস হোসাইন আফতাব : সকালটা ছিল অন্য দিনের মতোই। রাঙ্গুনিয়া সরকারি কলেজের পরিচিত করিডোর, শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষক মিলনায়তন—সবই যেন স্বাভাবিক। তবু বাতাসে ছিল এক অদ্ভুত ভারি ভাব। হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন আহমদ জানতেন, এটাই তাঁর শেষ কর্মদিবস।
৩২ বছরের শিক্ষকতা জীবনের প্রতিটি দিন যেন চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। ১৯৯৩ সালের এক সকালে এই কলেজেই শুরু হয়েছিল তাঁর শিক্ষকতার যাত্রা। সেদিন যে ক'জন শিক্ষার্থীকে প্রথম পাঠ দিয়েছিলেন, তাদের অনেকেই এখন প্রতিষ্ঠিত—কেউ ব্যাংকার, কেউ শিক্ষক, কেউ আবার সরকারি কর্মকর্তা।
রোববার (১০ আগস্ট) বিকেলে শিক্ষক মিলনায়তনে বসেছিল বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন। সভাপতিত্ব করছিলেন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শেখ মুজিবুর রহমান। সঞ্চালনায় ছিলেন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রধান ও শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. আবদুল মাবুদ।
বক্তৃতায় প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ একেএম সুজা উদ্দিন থেকে শুরু করে সহকর্মীরা স্মৃতিচারণ করলেন তাঁর সাথে কাটানো দিনগুলোর। কারও কণ্ঠে স্মৃতির উষ্ণতা, কারও চোখে জল। “তিনি শুধু শিক্ষক নন, ছিলেন এক পরামর্শদাতা, এক বন্ধু, এক অভিভাবক,” বললেন মোহাম্মদ মোকতার হোসেন। স্মৃতিচারণ করেন কলেজ এর অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ নুরুল মোমেন চৌধুরী, সৈয়দ নাসিম উদ্দিন, মনোজিত কুমার ধর, হোমায়রা রওশন, প্রণয় কুমার বড়ুয়া, মো. ইফতেখার হোসাইন, জাহেদুল আলম, এরশাদুল মোস্তফা, মোতাহের হোসাইন। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে ফুলেল শুভেচ্ছা দেওয়া হলো তাঁকে। সবার ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় সিক্ত হলেন তিনি।
সেদিনের সূর্য অস্ত গেলেও কলেজের দেয়াল, করিডোর আর শিক্ষার্থীদের মনে রয়ে গেল ৩২ বছরের এক নিষ্ঠাবান শিক্ষকতার গল্প। হয়তো আগামী দিনে নতুন প্রজন্ম যখন হিসাব বিজ্ঞানের কোনো অধ্যায়ে মন দেবে, তখন কেউ না কেউ বলবে—“এই জায়গাটা তো মেজবাহ স্যারের পড়ানো ছিল।”