
সুবর্ণা বড়ুয়া
বাংলা ভাষায় কবিতা পড়া এক জিনিস, আর কবিতাকে কণ্ঠে জীবন্ত করে তোলা আরেক জিনিস। এই জীবন্ত করে তোলার নামই ‘আবৃত্তি’। কেউ কেউ ভাবেন, কবিতা মুখস্থ বললেই বুঝি আবৃত্তি হয়। আসলে না। আবৃত্তি মানে—শব্দের ভেতরের সুর খুঁজে পাওয়া, ছন্দের সাথে হৃদয়ের মিল ঘটানো, আর ভাবটুকু শ্রোতার মন পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া। এটা কেবল পড়া নয়—এটা একধরনের ‘বলা’, যেখানে কণ্ঠই প্রধান মাধ্যম।
আমরা প্রতিদিন কথা বলি। কিন্তু আমরা কয়জন ভেবে দেখি, শব্দগুলো ঠিকভাবে উচ্চারণ করছি তো? আমাদের কণ্ঠ কি শ্রুতিমধুর ?
আবৃত্তির চর্চা করলে এইসব প্রশ্নের উত্তরও ধীরে ধীরে নিজের ভেতর খুঁজে পাই। শুদ্ধ উচ্চারণ শেখা যায়, ভাষার সৌন্দর্য্য অনুভব করা যায়, এবং সবচেয়ে বড় কথা—নিজেকে উপস্থাপনের সাহস তৈরি হয়।
আবৃত্তি শেখা মানে কেবল মঞ্চে দাঁড়িয়ে কবিতা বলা নয়।
এটা দরকার—
শিক্ষকতা করতে চাইলে,
বক্তৃতা দিতে চাইলে,
উপস্থাপক হতে চাইলে,
কিংবা একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষ হতে চাইলে।
আবৃত্তি শেখার মধ্য দিয়ে আমাদের মধ্যে গড়ে ওঠে ভাষার প্রতি এক ধরণের সম্মানবোধ।
আমরা তখন আর শুধু বলি না—ভাবিয়ে বলি।
আমাদের বাংলা ভাষা সহজ, সরল, মধুর।
এই ভাষার জন্য মানুষ জীবন দিয়েছে।
যে ভাষার জন্য শহীদ হয়েছি, সেই ভাষাকে যদি আমরা নিজে ঠিক করে বলতে না পারি, তবে তা ভাষার প্রতি অন্যায় নয় কি?
আজ যারা ছোট, আগামীতে তারাই নেতৃত্ব দেবে।
তারা যদি শুরুতেই শুদ্ধভাবে বাংলা বলা শেখে, তাহলে বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ হবে আরও উজ্জ্বল।
তাই বলি—আসুন, আমরা সবাই আবৃত্তির চর্চা করি।
আবৃত্তিকে শুধু শিল্প নয়—ভাষা ভালোবাসার এক ধরণের অনুশীলন ভাবি।
নিজের কণ্ঠকে বানিয়ে তুলি কবিতার বাহন, ভালোবাসার মাধ্যম।
বাংলা হোক আমাদের গর্ব, আর আবৃত্তি হোক সেই গর্বের কণ্ঠস্বর।
লেখক—
শিক্ষক,বাচিক শিল্পী