
আনোয়ারুল মোস্তাকিন চৌধুরী :
প্রাথমিক বিদ্যালয় একটি শিশুর শিক্ষা জীবনের প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক ধাপ। এখান থেকেই তার শিক্ষা, চিন্তা ও চরিত্র গঠনের সূচনা ঘটে। শিশুরা তাদের চারপাশের জগৎকে বোঝার এবং নিজের ভিতরের প্রতিভা ও দক্ষতাকে বিকাশ করার সুযোগ পায় এই পর্যায়ে। তাই, প্রাথমিক বিদ্যালয় শুধু পাঠ্যপুস্তক শেখার স্থান নয়, এটি একটি শিশুর আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি।
বিদ্যালয় যেন হয়ে ওঠে আস্থার জায়গা :
শিশুরা যাতে বিদ্যালয়কে ভালোবাসে এবং সেখানে নিরাপদ ও আনন্দিত অনুভব করে, সে পরিবেশ তৈরি করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব। একমাত্র আনন্দময়, বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহানুভূতিশীল পরিবেশেই শিশু তার জ্ঞান গ্রহণে আগ্রহী হয় এবং দীর্ঘমেয়াদে তা মনে রাখতে পারে। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, শিক্ষক—শিক্ষিকার ব্যক্তিগত বা পারিবারিক মানসিক চাপ শ্রেণিকক্ষে প্রতিফলিত হয়, যা শিশুদের শিখনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আমাদের উচিত শ্রেণিকক্ষে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব বজায় রাখা এবং শিশুর প্রতি সহানুভূতিশীল থাকা।
অভিভাবকদের দায়িত্ব :
শিক্ষা শুধু বিদ্যালয়েই সীমাবদ্ধ নয়; পরিবারও এই প্রক্রিয়ার একটি বড় অংশ। প্রতিদিন স্কুলে উপস্থিত থাকা, যথাযথ পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, নিয়মিত ঘুম, এবং পরিচ্ছন্নতা রক্ষা—এই বিষয়গুলো অভিভাবকদের সরাসরি নজরদারির মধ্যে থাকা উচিত। শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্য এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষক ও অভিভাবক—উভয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি শিশুর পূর্ণাঙ্গ বিকাশ সম্ভব।
মানসম্মত শিক্ষক ও আলোকিত ভবিষ্যৎ :
সৌভাগ্যবশত, বর্তমানের অনেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মেধাবী, সৃজনশীল ও নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক—শিক্ষিকা নিয়োজিত রয়েছেন। তাঁদের হাতে তৈরি হতে পারে একটি দক্ষ, মানবিক, ও দায়িত্বশীল ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। শুধু পাঠ্যবই নয়, মানবিকতা, সহনশীলতা, সময়ানুবর্তিতা ও দেশপ্রেমের শিক্ষাও এ পর্যায়েই শিশুদের মাঝে গড়ে তুলতে হবে।
পরিশেষে বলা যায়,
শিশুর মানসিক ও চারিত্রিক ভিত্তি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গড়ে ওঠে। এই ভিত্তি যদি মজবুত হয়, তাহলে সে ভবিষ্যতে জ্ঞানে, চরিত্রে ও মানবিকতায় পরিপূর্ণ একজন নাগরিক হয়ে উঠতে পারবে। তাই প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া, মানসম্মত শিক্ষক নিশ্চিত করা এবং অভিভাবকদের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন—এই তিনটি দিকেই আমাদের সর্বোচ্চ মনোযোগ দিতে হবে। তাহলেই গড়ে উঠবে একটি উন্নত ও আলোকিত বাংলাদেশ।
লেখক— সহকারী শিক্ষক,
মরিয়মনগর বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়