
অর্ণব মল্লিক
রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সৈয়দবাড়ি গ্রামটি সংস্কৃতিমনা ও ঐতিহ্যবাহী জনপদ হিসেবে পরিচিত। এই গ্রামে রয়েছে একটি বিশেষ পরিবার, যাদের স্থানীয়রা ভালোবেসে ডাকে ‘গানের বাড়ি’। বাড়িটির প্রতিটি সদস্য সংগীতচর্চায় নিবেদিত। প্রতিদিনই ভেসে আসে গান ও যন্ত্রসংগীতের সুর।
এই পরিবারের মূল দুই কান্ডারি তবলাশিল্পী রানা বড়ুয়া ও সংগীতশিল্পী ও প্রশিক্ষক ফুলকি বড়ুয়া। স্বামী—স্ত্রী দুজনই সংগীতের সঙ্গে জড়িত বহু বছর ধরে। ২০০৮ সালে বিয়ের পর থেকে দুজন একসঙ্গে সংগীতচর্চা ও প্রশিক্ষণে যুক্ত।
রানা বড়ুয়া পেশায় চাকরিজীবী হলেও অবসর সময় তবলা চর্চা ও প্রশিক্ষণে ব্যয় করেন। ১৯৯২ সালে মা—বাবার উৎসাহে তবলা শেখা শুরু করেন এবং ১৯৯৬ সাল থেকে নিয়মিত মঞ্চে পারফর্ম করে আসছেন। পাশাপাশি ২০০৩ সালে নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন ‘মিনা সংগীত বিদ্যালয়’।
এই বিদ্যালয়ের সংগীত প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন তার স্ত্রী ফুলকি বড়ুয়া। ছোটবেলায় বড় ভাই পরাগ বড়ুয়ার কাছে সংগীতের হাতেখড়ি, পরবর্তীতে বাংলাদেশ বেতারের নিয়মিত শিল্পী হিসেবে সংগীত পরিবেশন শুরু করেন। এখন পর্যন্ত শতাধিক শিক্ষার্থীকে তালিম দিয়েছেন তিনি, যাদের অনেকে বেতার—টেলিভিশনে গান করছেন।
এই সংগীতপ্রেমী দম্পতির এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তানও সংগীতচর্চায় যুক্ত। কন্যা অপ্সরী বড়ুয়া ফ্লোরা জাতীয় শিশু পুরস্কারসহ বিভিন্ন সম্মাননা অর্জন করেছে। সে বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনে নিয়মিত সংগীত পরিবেশন করে। ছোট ছেলে অরিত্র বড়ুয়া রাজ মাত্র ৫ বছর বয়সেই ইউকুলেলে বাজাতে পারদর্শী।
তবলাশিল্পী রানা বড়ুয়া বলেন, ‘সংগীতকে পেশা করতে না পারলেও ভালোবাসা দিয়ে আঁকড়ে আছি। চাই আমার সন্তানরা সংগীতকে হৃদয়ে ধারণ করুক।
ফুলকি বড়ুয়া বলেন,‘ ছাত্রছাত্রীদের গানের তালিম দিতে পেরে গর্ববোধ করি। স্বামী যখন তবলা বাজান, আমি গান করি— তখন নিজেকে পূর্ণ মনে হয়।’
এই সংগীত দম্পতির বিশ্বাস, শুদ্ধ সংগীত চর্চার জন্য দরকার শাস্ত্রীয় সংগীতের ভিত্তি ও গুরুমুখী শিক্ষা। ভবিষ্যতে রাঙ্গুনিয়ায় সংগীতচর্চা আরও ছড়িয়ে দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন তাঁরা।