আব্বাস হোসাইন আফতাব : চট্টগ্রামের পাহাড়ঘেরা রাঙ্গুনিয়া উপজেলা। এখানকার মেয়েদের উচ্চশিক্ষার অন্যতম আশ্রয়স্থল,রাঙ্গুনিয়া মহিলা কলেজ। ১৯৯৫ সালে ছোট পরিসরে যাত্রা শুরু করা এই কলেজ আজ রাঙ্গুনিয়ার শিক্ষাজগতে এক উজ্জ্বল নাম। সময়ের পরিক্রমায় দুই দশক পেরিয়ে গেলেও কলেজটির সাফল্যের ধারা আজও অবিচল।
২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর পুরো রাঙ্গুনিয়া জুড়েই আলোচনায় এই কলেজের নাম। উপজেলায় নয়টি কলেজের মধ্যে পাশের হার ও জিপিএ ৫-এর সংখ্যায় রাঙ্গুনিয়া মহিলা কলেজ আবারও প্রথম স্থান অধিকার করেছে।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট ২৬৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ২০১ জন, অনুত্তীর্ণ ৬৪ জন। পাশের হার ৭৫.৮৫ শতাংশ। জিপিএ ৫ অর্জন করেছে ৭ জন শিক্ষার্থী।
শিক্ষকের নিষ্ঠা আর শিক্ষার্থীর পরিশ্রমের ফল
কলেজের অধ্যক্ষ ছরোয়ার সালেক সিকদার বলেন,“১৯৯৫ সালে কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকে আমরা শিক্ষার মানে কখনোই ছাড় দেইনি। এতিম, দরিদ্র ও অসহায় শিক্ষার্থীদের জন্য ১০০% বিনা খরচে পাঠদান, কোচিং ও বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থাই এই ধারাবাহিক সফলতার মূল কারণ। শিক্ষকদের আন্তরিকতা ও শিক্ষার্থীদের পরিশ্রমই আমাদের গর্ব।”
সাফল্যের গল্প: উম্মে হাবিবা ও সাবেরা মীম
বিজ্ঞানে জিপিএ-৫ পাওয়া উম্মে হাবিবা জ্যোতি জানান, “আম্মুর অনুপ্রেরণা আর কলেজের শিক্ষকদের সঠিক দিকনির্দেশনায় ইংরেজি ছাড়া বাকি সব বিষয়ে ভালো ফল করতে পেরেছি। সবার দোয়ায় ভবিষ্যতে চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে চাই।”
অন্যদিকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পাওয়া উম্মে সাবেরা মীম বলেন,“দাখিলে কখনো এ প্লাস পাইনি। কিন্তু এখানকার শিক্ষকরা আমাকে বিশ্বাস করেছেন, উৎসাহ দিয়েছেন। এবার ১৩০০ নম্বরে ১০৯০ পেয়েছি—এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত।”
সাফল্যের পরিসংখ্যান
বিজ্ঞান বিভাগে উত্তীর্ণ ৮৯ জন, ব্যবসায় শিক্ষায় ৫৬ জন এবং মানবিকে ৬৬ জন। তিন বিভাগ মিলিয়ে মোট উত্তীর্ণ ২০১ জন। উপজেলায় পাশের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক থেকে কলেজটি শীর্ষে রয়েছে।
রাঙ্গুনিয়ার শিক্ষায় আলোর দিশা
রাঙ্গুনিয়া মহিলা কলেজের এই সফলতা কেবল একটি প্রতিষ্ঠানের নয়—এটি পুরো উপজেলার মেয়েদের শিক্ষার এগিয়ে চলার প্রতীক। যেসব পরিবার একসময় মেয়েদের কলেজে পাঠাতে দ্বিধাগ্রস্ত ছিল, আজ সেই পরিবারগুলো মেয়েদের হাতে তুলে দিচ্ছে স্বপ্নের কলম।
রাঙ্গুনিয়ার শিক্ষাঙ্গনে এখন যে নামটি অনুপ্রেরণা জাগায়—
রাঙ্গুনিয়া মহিলা কলেজ।
যার সাফল্যের গল্প ২০ বছর পেরিয়েও আজও সমান দীপ্ত।