আব্বাস হোসাইন আফতাব
রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার মুরাদনগর সড়কটি ছিল বছরের পর বছর ধরে খানাখন্দে ভরা। বর্ষা এলেই সড়কটি রূপ নিত জলকাদার খালে, শুকনো মৌসুমেও ধুলাবালিতে পরিণত হতো যাত্রীদের দুঃস্বপ্নে। প্রতিদিনই এই পথে হাঁটতেন, চলাচল করতেন হাজারো মানুষ। স্কুলপড়ুয়া ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে কৃষক, শ্রমিক, দোকানদার সবাই। কিন্তু দুর্ভোগের অবসান হচ্ছিল না কোনোভাবেই।
অবশেষে এগিয়ে এলেন একজন, রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহবায়ক মো. কামাল হোসাইন। সরকারি সহায়তা বা তহবিলের অপেক্ষা না করে তিনি নিজ উদ্যোগে শুরু করলেন সড়ক সংস্কারের কাজ।
সরেজমিনে দেখা যায়, পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ভাঙাচোরা অংশগুলোতে চলছিল ব্যস্ত সংস্কার কাজ। কামাল হোসাইন নিজেই তদারকি করছিলেন প্রতিটি ধাপ, কোথাও স্ল্যাব বসানো হচ্ছে, কোথাও পানিনিষ্কাশনের পাইপ। পাশে কাজ করছে স্থানীয় তরুণরা, ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা, আর গ্রামের কিশোররা।
ইট, সিমেন্ট, কংকর আর বালির গন্ধে ভরে উঠেছিল চারদিক। ৫ ফুট বাই ৩ ফুট আকারের স্ল্যাব, কিছু স্থানে ১০ ফুট ওয়াল এবং ১৫ ফুট পাইপ বসানো হয় সড়কটিতে। নিজের খরচে, নিজের সময় দিয়ে এই কাজ করেছেন কামাল হোসাইন।
তিনি বলেন, “এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন প্রচুর মানুষ যাতায়াত করে। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা ছিল। সরকারের উদ্যোগ না আসায় আমি ভেবেছি, নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু করি। মানুষের দোয়া পেলেই সেটাই বড় পাওয়া।”
“আমাদেরও মনে হলো, এটাই প্রকৃত নেতৃত্ব”
সংস্কার কাজের সময় স্থানীয়রা একে একে এসে সহযোগিতা করতে শুরু করেন। কেউ শ্রম দিচ্ছেন, কেউ পানি এনে দিচ্ছেন, কেউবা বালু ছিটিয়ে দিচ্ছেন। এক তরুণ বললেন,
“রাজনীতি মানে শুধু বক্তৃতা নয়, এমন সময় পাশে থাকা। কামাল ভাই আমাদের সেটাই শিখিয়েছেন।”
এই উদ্যোগে শুধু একটি রাস্তা সংস্কার হয়নি, জেগে উঠেছে সামাজিক সচেতনতার বার্তা। রাঙ্গুনিয়ার মতো প্রত্যন্ত এলাকায় সরকারি পদক্ষেপের অপেক্ষা না করে কেউ যখন নিজের টাকায় এমন উদ্যোগ নেয়, তখন তা হয়ে ওঠে সমাজের অনুপ্রেরণা।
স্থানীয়রা এখন চাইছেন সড়কটি স্থায়ীভাবে সংস্কার করা হোক সরকারিভাবে, যাতে এই উদ্যোগের সুফল দীর্ঘস্থায়ী হয়।
সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে এক বৃদ্ধ কৃষক বললেন,
“বহু বছর ধরে কষ্ট করে যেতাম এই রাস্তা দিয়ে। আজ অন্তত কিছুটা স্বস্তি পেয়েছি। আল্লাহ কামাল ভাইয়ের মঙ্গল করুন।”
ছোট উদ্যোগ, বড় স্বস্তি। কামাল হোসাইনের এই মানবিক পদক্ষেপ হয়তো পুরো সড়ক মেরামত করেনি, কিন্তু মানুষের মনে একটাই বার্তা দিয়েছে, “ইচ্ছা থাকলে পরিবর্তন সম্ভব, যদি কেউ উদ্যোগ নেয়।”