আব্বাস হোসাইন আফতাব : আজ সকালটা ছিল রাঙ্গুনিয়ার পোমরা ইউনিয়নের সিকদার পাড়ার মানুষের কাছে আর পাঁচটা দিনের মতোই। কেউ কাজে বের হচ্ছিলেন, কেউবা রান্নার ধোঁয়া তুলছিলেন চুলায়। ঠিক সেই সময়, যেন কোনও দুঃস্বপ্ন এসে আছড়ে পড়ে, হঠাৎই এক পরিবারের ঘর থেকে বের হতে থাকে আগুনের লেলিহান শিখা। মুহূর্তেই সেই আগুন গ্রাস করে নেয় ঘরবাড়ি, আসবাব, পোশাক, এমনকি বহু বছর ধরে জমানো সামান্য সঞ্চয়টুকুও রেহাই পায়নি।
দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা সেই ঘরের সামনে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে ছিল পরিবারটি। আগুন নেভানোর মরিয়া চেষ্টায় এগিয়ে যায় আশপাশের মানুষ, কিন্তু আগুনের তীব্রতা এতটাই ছিল যে চোখের সামনে সবকিছু ভস্মীভূত হয়ে যেতে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। আগুন নিভে যাওয়ার পর রয়ে যায় কালো ধোঁয়ার ছাপ, পুড়ে যাওয়া কাঠের গন্ধ আর গভীর হাহাকার, আজ তারা নিঃস্ব।
ঘটনার খবর পৌঁছায় প্রশাসনের কাছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেন পোমরা ইউনিয়নের প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেব্রবত দাশ। তাঁর নির্দেশে ইউপির প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. তাজ উদ্দিন ছুটে যান ঘটনাস্থলে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের হাতে তুলে দেন তাৎক্ষণিক শীতবস্ত্র ও একটি বস্তা চাল—দুঃসময়ের মুহূর্তে একটি কোমল সমবেদনার হাতছানি।
কিন্তু এখানেই থেমে থাকেননি দেব্রবত দাশ। তিনি পরিবারটিকে আশ্বাস দিয়ে বলেন—
“আপনাদের পাশে আমরা আছি। যতটা সম্ভব সহযোগিতা করা হবে।”
তিনি নিয়মিতভাবে পরিবারের খোঁজ নিচ্ছেন এবং পরবর্তী সরকারি সহায়তার ব্যবস্থাও নিশ্চিত করছেন।
এছাড়া তিনি এলাকার সচ্ছল ও হৃদয়বান মানুষদের উদ্দেশে আহ্বান জানিয়েছেন—
“মানুষের বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই মানবতা। এই পরিবারটিকে নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন।”
একটি আগুন শুধু একটি ঘর পুড়িয়ে দেয়, পুড়িয়ে দেয় বহু স্মৃতি, স্বপ্ন আর ভবিষ্যতের পরিকল্পনা। তবে মানুষ যদি মানুষের পাশে দাঁড়ায়, তবে সেই ছাইয়ের ভেতর থেকেও নতুন করে জন্ম নেয় আশা।
সিকদার পাড়ার এই পরিবারটির চোখে আজও আছে আতঙ্কের ছায়া, তবে সঙ্গে জেগেছে নতুন আশাও। সমাজ, প্রশাসন এবং মানবিক মানুষের সহায়তায় হয়তো তারা আবারও নতুন করে জীবন শুরু করতে পারবে, একটি উষ্ণ হাতের স্পর্শই পারে দুঃখের রাত পেরিয়ে নতুন সকাল এনে দিতে।