
আব্বাস হোসাইন আফতাব :
রাঙ্গুনিয়ার উপজেলা পরিষদের হলরুমে বিকেলের আলোটা ঠিক যেন অন্য দিনের মতো ছিল না। সাজানো টেবিলগুলোয় দাবার কোর্ট, হাতে হাত রেখে বসা কিশোর-কিশোরীরা, আর আশপাশে তীব্র মনোযোগে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষক ও অভিভাবক, সব মিলিয়ে যেন এক টানটান উত্তেজনা। কারও চোখে ভয়, কারও মুখে আত্মবিশ্বাস, আবার কারও কপালে ভাঁজ,কোনোভাবেই বোঝা যাচ্ছিল না কে জিতবে, কে হারবে। কিন্তু সবাই জানত এই ছোট্ট সাদা-কালো ঘর আর ৩২টি ঘুঁটির ভেতরেই লুকিয়ে আছে ভবিষ্যতের এক দক্ষ দাবাড়ু হয়ে ওঠার স্বপ্ন।
প্রথমবারের আয়োজন, উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘আন্তঃস্কুল দাবা প্রতিযোগিতা–২০২৫’ রাঙ্গুনিয়ার ইতিহাসে সম্ভবত সবচেয়ে সুশৃঙ্খল ও সর্ববৃহৎ দাবা আয়োজন।
পুরো আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য অসাধারণ, শিক্ষার্থীদের বিশ্লেষণী দক্ষতা ও কৌশলগত চিন্তা বাড়ানো, ধৈর্য শেখানো এবং সহশিক্ষা কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
এজন্য উপজেলার সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে নিজ নিজ স্কুলে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিয়ে অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে হয়। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান সেরা একজন দাবাড়ুকে বাছাই করে পাঠায় উপজেলা প্রশাসনের কাছে। তারপর শুরু হয় জোনভিত্তিক লড়াই, রাঙ্গুনিয়াকে ভাগ করা হয় চারটি জোনে। জোন থেকে ফাইনাল,ধাপে ধাপে উত্তেজনা
প্রথমে জোন, এরপর সেমিফাইনাল, আর সর্বশেষ ফাইনাল।প্রতিটি ধাপেই শিক্ষার্থীদের চোখেমুখে বাড়তে থাকে উত্তেজনা। কারও কৌশল ছিল রক্ষণাত্মক, কেউ আবার শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলায় প্রতিপক্ষকে চমকে দিচ্ছিল। ছোট্ট মঞ্চে তাদের খেলার প্রতিটি চালের সঙ্গে দর্শকরাও যেন নীরবে ‘চেক’ আর ‘চেকমেট’-এর ধাঁধায় ডুবে যাচ্ছিল। যেদিন ফাইনাল,প্রশংসায় ভরল মঞ্চ
১৯ নভেম্বর, বুধবার। বিকেলের দিকে ইউএনও মো. কামরুল হাসান উপস্থিতিতে ফাইনাল রাউন্ড হয়ে গেল উৎসবমুখর পরিবেশে। শেষে চ্যাম্পিয়ন ইশরাক চৌধুরী রাজিতসহ বিজয়ীদের হাতে ট্রফি, মেডেল, সনদ তুলে দেওয়া হলে মুখে হাসি ফোটে সবার, তবে আলো ছিল সবচেয়ে বেশি ছোট্ট চ্যাম্পিয়নের চোখে, যে মনে হয় আজই নিজের ভবিষ্যতের একটা পথ খুঁজে পেল।
আয়োজনের গুরুত্ব তুলে ধরে ইউএনও মো. কামরুল হাসান বলেন, “দাবা শিশুদের বিশ্লেষণী চিন্তা, ধৈর্য ও কৌশলগত দক্ষতা বাড়ায়। এই আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শুধু খেলাই শেখে না, তারা যুক্তি, মনোযোগ আর আত্মবিশ্বাস অর্জন করে। ভবিষ্যতে সহশিক্ষা কার্যক্রম আরও বিস্তৃত হবে।”
রাঙ্গুনিয়ার দাবাড়ুরা, আগামী দিনের সম্ভাবনা
এই আয়োজন শুধু একটি প্রতিযোগিতা নয়; এটি রাঙ্গুনিয়ার শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক নতুন চিন্তাধারার সূচনা।
বইয়ের বাইরে ভিন্ন এক জগৎ, যেখানে কৌশল, মনোযোগ, গণনা আর ধৈর্য একসঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যায় প্রজন্মকে। শিশুদের চোখে সেদিন যে উচ্ছ্বাস দেখা গিয়েছিল, তা প্রমাণ করে,রাঙ্গুনিয়া ঠিক পথে হাঁটছে।