
আব্বাস হোসাইন আফতাব :
রাঙামাটি সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্র আ র টি রাশেদ। পড়াশোনায় মনোযোগী, শান্ত স্বভাবের,পরিবার, বন্ধু, শিক্ষক সবার প্রিয়। ইতিহাস পড়ত প্রবল ভালোবাসা নিয়ে। স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হওয়ার, গ্রামের ছেলেমেয়েদের পড়িয়ে মানুষ বানানোর।
আজ (২০ নভেম্বর) ছিল তার পরীক্ষার দিন। ব্যাগে ছিল কলম, অ্যাডমিট কার্ড, কিছু নোট,আর ছিল ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন।
কিন্তু সেই ব্যাগই পরে পাওয়া গেল ছিন্নভিন্ন অবস্থায় রাস্তার পাশে পড়ে। বইয়ের ছেঁড়া পাতাগুলো বাতাসে উড়ছিল, আর মানুষ ছুটছিল আহতদের দিকে। জীবন আর মৃত্যুর মাঝের কয়েক সেকেন্ডে থেমে গেল রাশেদের পথচলা।
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার রাজানগরের ঠান্ডাছড়ি এলাকায় সকালটা যেন মুহূর্তেই অন্ধকার হয়ে যায়। স্থানীয়রা এখনও আতঙ্কিত হয়ে ঘটনাটি বর্ণনা করেন। ছাইরিবাজার এর দিক থেকে আসা চাঁদের গাড়িটির ধাক্কায় নিয়ন্ত্রণ হারায় ট্রাকটি, আর সেই ট্রাক সোজা উঠে যায় সিএনজি চালিত অটোরিকশার ওপর। যাত্রীদের চিৎকার, ধুলো, রক্ত, ভাঙা কাঁচের শব্দ,সব মিলিয়ে এক ভয়াবহ দৃশ্য।
দুর্ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই রাশেদের গ্রামের বাড়িতে বাজল ফোন। প্রথমে পরিবার কেউই বিশ্বাস করতে পারছিল না। মা ভেবেছিলেন—
“হয়তো সিগনাল নেই… তাই ফোন ধরছে না।”
কিন্তু যখন সত্যটা জানানো হলো, তিনি ভেঙে পড়লেন।
এক মা হারাল তার শেষ ভরসা,
এক বাবা হারাল পরিবারের ভবিষ্যৎ,
এক বোন হারাল তার প্রিয় ভাইটিকে।
রাশেদ কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার দমদমিয়া দক্ষিণ হ্নীলা গ্রামের আবুল বশরের ছেলে। রাঙামাটি সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি।
“পরশু তার জন্মদিন…” বন্ধুরা ভেঙে পড়েছে
রাশেদের সহপাঠীরা দুঃসংবাদ পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে। একজন বন্ধু কাঁদতে কাঁদতে বলল,“পরশু তার জন্মদিন ছিল। কেক কাটার কথা ঠিক করেছিলাম। আজ আমরা তার জন্যই কাঁদি…”
আরেকজন বলল,“ইতিহাসে লেকচার দিত খুব সুন্দর করে। ওর মতো শান্ত ছেলে আমরা আর পাবো না।” বন্ধুরা শুধু একটাই দাবি জানায়,রাশেদের মৃত্যু যেন তদন্ত হয়, এবং রাস্তায় আর কোনো তরুণের জীবন অকালে হারিয়ে না যায়।
একটি সকাল। একটি দুর্ঘটনা। একটি পরিবার, চিরদিনের জন্য বদলে গেল।