আব্বাস হোসাইন আফতাব: বিয়ে হয়েছে মাত্র একদিন। চারদিকে ছিল আনন্দ, শুভকামনা আর নতুন জীবনের স্বপ্ন। ঠিক এমন সময়ই স্বামী মো. সানাউল্লাহর হাত ধরে কাপ্তাই লেক ঘুরতে বের হন ইপসানা বেগম। জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষকে পাশে নিয়ে প্রকৃতির শান্ত নীল জলরাশিতে একটুখানি ভ্রমণ,এটাই ছিল তাঁদের ছোট্ট পরিকল্পনা।
কিন্তু ভাগ্যের অদৃশ্য কোনো বাঁক হয়তো অপেক্ষা করছিল তাঁদের জন্য। রাঙামাটির কাপ্তাই যাওয়ার পথে রাঙ্গুনিয়া থানা সদরের কাছে সৈয়দবাড়ির হরিণ গেট এলাকায় মোটরসাইকেলের পেছনের চাকায় ইপসানার বোরকা পেঁচিয়ে যায়। মুহূর্তেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ছিটকে পড়েন দুজনই। পৃথিবী যেন ওলটপালট হয়ে যায় নবদম্পতির।
২০ বছর বয়সী ইপসানা বেগম এখন চট্টগ্রাম নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) জীবন-মৃত্যুর লড়াই করছেন। পাশে আছেন তাঁর স্বামী সানাউল্লাহ,নিজেও আহত, কিন্তু স্ত্রীর অপেক্ষায় আরও বেশি বিধ্বস্ত।
উপজেলার হোসনাবাদের নিশ্চিন্তাপুর এলাকার মো. হাসানের মেয়ে ইপসানা পরিবারের সবার আদরের। বিয়ের আনন্দের রেশ কাটেনি, বাড়িতে এখনও অতিথিদের আনাগোনা। অন্যদিকে পারুয়ার বলির বাড়ির মো. জহির আহমেদের ছেলে সানাউল্লাহ সৌদি প্রবাসী, সদ্য দেশে এসেছেন বিয়ে করতে। জীবনের দুইটি পরিবার নতুন সম্পর্কের বন্ধনে এক হয়ে খুশিতে ভাসছিল।
দুর্ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন ছুটে এসে তাঁদের উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। স্বজন মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,“বাড়ি থেকে মাত্র পাঁচ-সাত কিলোমিটার যাওয়ার পরই বিপদটা হলো। আমরা কোনোভাবেই ভাবতে পারিনি এমন কিছু ঘটতে পারে।”
পুলিশও বলছে,থরথর কাঁপিয়ে দেওয়া ঘটনা
রাউজান-রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মুহাম্মদ বেলায়াত হোসেন জানান, “স্বামী বিয়ের পরদিন নববধূকে নিয়ে কাপ্তাই বেড়াতে যাচ্ছিলেন। পথে মোটরসাইকেলের চাকার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুইজনই এখন হাসপাতালে।”
নতুন জীবনের শুরুতে এমন দুর্ঘটনা শুধু একটি পরিবারকেই নয়, পুরো এলাকার মানুষকেও গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। মোটরসাইকেল ভ্রমণের সামান্য অসাবধানতাও যে কত বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে, ইপসানা ও সানাউল্লাহর গল্প তার নির্মম প্রমাণ।