
আব্বাস হোসাইন আফতাব: ভোরের নীরবতা তখনও পুরোপুরি কাটেনি। ফজরের আজান শোনা যাওয়ার আগমুহূর্তে হঠাৎই আগুনের লেলিহান শিখা ছুটে ওঠে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার রাজানগর ইউনিয়নের জোরের কুল এলাকায়। মুহূর্তের মধ্যেই আগুন গ্রাস করে নেয় রানীরহাট বাজার-সংলগ্ন সাতটি দোকান। ঘুম ভাঙে ব্যবসায়ী ও আশপাশের মানুষের,চিৎকার, দৌড়ঝাঁপ আর আতঙ্কে ভরে ওঠে পুরো এলাকা।
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) ভোররাত আনুমানিক ৫টার দিকে ঘটে এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। স্থানীয়দের ধারণা, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকেই আগুনের সূত্রপাত। কাঠের দোকান হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের দোকানগুলোতে।
খবর পেয়ে স্থানীয়রা যে যার মতো করে ছুটে আসেন। কেউ পানি বহন করেন, কেউ আগুন নেভানোর চেষ্টা চালান। পার্শ্ববর্তী রাঙ্গামাটির কাউখালি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও ততক্ষণে স্থানীয়দের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আগুন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসে।
এই অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানগুলোর মধ্যে রয়েছে, আব্দুল খালেকের কাঠের দোকান, বাবুলের মালিকানাধীন দুটি কাঠের দোকান, শুমুল বড়ুয়ার মোটর মেকানিকস, মুহাম্মদ সুলতানের চায়ের দোকান এবং মুহাম্মদ সাদ্দামের মোটর পার্টসের দোকান।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন খাজা মোটর এন্ড বাইক সার্ভিসিং সেন্টারের মালিক মুহাম্মদ সাদ্দাম। আগুনে পোড়া দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে কণ্ঠ ভারী করে তিনি বলেন,
“কয়েকদিন আগেই ঋণ নিয়ে নতুন মাল তুলেছিলাম। সব শেষ হয়ে গেল। একাই প্রায় ৪০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে আমার।”
অন্য দোকানিরাও জানিয়েছেন, সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪৫ লাখ টাকা। অনেকের দোকানই ছিল সংসারের একমাত্র আয়ের উৎস।
রানীরহাট বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জাহেদুল আলম চৌধুরী বলেন,
“বাজারের পাশের এসব দোকান পুড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। তাদের ঘুরে দাঁড়াতে সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা এখন অত্যন্ত জরুরি।”
এক রাতের আগুন কেড়ে নিয়েছে বছরের পর বছর ধরে গড়ে তোলা ব্যবসা, স্বপ্ন আর জীবিকার অবলম্বন। পোড়া দোকানের ছাইয়ের ভেতর দাঁড়িয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা এখন তাকিয়ে আছেন সহানুভূতি ও সহায়তার দিকে,নতুন করে বাঁচার আশায়।