আব্বাস হোসাইন আফতাব: রাঙ্গুনিয়ার ইছাখালীর একটি কমিউনিটি সেন্টারের পাশের কক্ষে প্রতিদিনই ভিড়। কারও হাতে শিশুর ছবি, কারও চোখে উৎকণ্ঠা, আবার কারও চোখে আশার ঝিলিক। এখানে আসেন শারীরিক, মানসিক কিংবা বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও তাঁদের অভিভাবকেরা। কারণ, এই জায়গাটিই তাঁদের কাছে এখন আশার নাম ‘প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র’।
২০১২ সাল থেকে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এক ছাদের নিচে চিকিৎসা, কাউন্সেলিং, পুনর্বাসন ও দিকনির্দেশনামূলক সেবা দিয়ে সমাজের অবহেলিত এই জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে কেন্দ্রটি। ধীরে ধীরে এই উদ্যোগ আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা হয়ে উঠেছে।
কেন্দ্রটির অভিজ্ঞ কনসালটেন্ট এস এম নোমান ও তাঁর টিমের কাছে শুধু রোগ নয় মানুষটাই মুখ্য। ব্যক্তিকেন্দ্রিক পরামর্শ, থেরাপি পরিকল্পনা এবং সামাজিক অন্তর্ভুক্তির কৌশলের মাধ্যমে তাঁরা চেষ্টা করছেন প্রতিবন্ধী মানুষ ও তাঁদের পরিবারের জীবনকে একটু সহজ করতে।
জান্নাতুলের নানী চোখের কোণে জমে ওঠা হাসি লুকাতে পারেন না। তিনি বলেন,
“এই কেন্দ্রের কনসালটেন্টদের সহযোগিতায় আমার নাতনীর উন্নতি চোখে পড়ার মতো। আগে যে ভয় আর দুশ্চিন্তা ছিল, এখন তার জায়গায় এসেছে আশার আলো।”
আরেক অভিভাবকের কথায়,
“এই কেন্দ্র আমাদের জীবনে নতুন করে বাঁচার সাহস দিয়েছে।”
চন্দ্রঘোনা থেকে আসা মো. শফির গল্পটিও এমনই। নিজে সেবা নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠার পর এবার ভাই মো. আক্তারকে নিয়ে এসেছেন এখানে। শফি বলেন,
“এখানকার কনসালটেন্টরা খুব ধৈর্য নিয়ে রোগের সমস্যা আর করণীয় বুঝিয়ে দেন। তাঁদের ব্যবহার আর আন্তরিকতায় মন ভরে যায়।”
অনেক অভিভাবকই বলেন, এস এম নোমানের মূল্যায়নে তাঁদের সন্তানের সমস্যার ধরন স্পষ্ট হয়েছে। তাঁদের ভাষায়,
“তিনি শুধু ডাক্তার নন, আমাদের মানসিক শক্তির জায়গা। তাঁর পরামর্শে থেরাপির পথটা অনেক সহজ হয়েছে।”
এস এম নোমান জানান, শারীরিক, মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিবন্ধী এবং ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের জন্য ফিজিওথেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, স্পিচ থেরাপিসহ নানা ধরনের সেবা দেওয়া হচ্ছে। সহানুভূতি, পেশাদারিত্ব ও মানবিকতাকে সামনে রেখে এগিয়ে যাওয়াই তাঁদের লক্ষ্য।
সরকারি বরাদ্দ সাপেক্ষে প্রতিবছর বিভিন্ন সহায়ক উপকরণ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। এই কার্যক্রম আরও বিস্তৃত করতে সরকারি দপ্তর ও স্থানীয় বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার কথাও জানান তিনি। পাশাপাশি ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত সেবার তথ্য পৌঁছে দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেন।
কেন্দ্রের প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা সেতারাই ফেরদৌস জানান, ভবিষ্যতে আরও আধুনিক সেবা, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।
এদিকে কারিতাস ও এওয়াক নামের এনজিও কমিউনিটি পর্যায়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা, তথ্যভান্ডার তৈরি, পরিবারকে সচেতন করা এবং কর্মসংস্থান সহায়তায় কাজ করছে। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে সমাজে অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে তাদের এই প্রচেষ্টায় ‘প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র’-এর কর্মকর্তা ও কনসালটেন্টদের সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ইছাখালীর সেই ছোট্ট কক্ষ থেকেই যেন প্রতিদিন জন্ম নিচ্ছে বড় এক স্বপ্ন,একটি মানবিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের।